ঢাকা ০৮:২০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ২১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ৬০ বোতল ফেন্সিডিলসহ দুই নারী মাদক কারবারি আটক রাজাপুরের চাড়াখালী স্কুলে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়েছে বিশ্ব শিক্ষক দিবস দুমকি উপজেলায়, বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র‍্যালি ও আলোচনা সভা ভূরুঙ্গামারীতে ডিভোর্সি যুবকের কাছে মুক্তিপণ দাবিতে কথিত এক সাংবাদিক ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ গ্রেফতার চার দুমকি উপজেলায়, এলজিইডির সড়কের বেহাল দশা,দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাকাকরণের দাবি কেশবপুরে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে র‍্যালি  ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত দিনাজপুরে বিশ্ব শিক্ষক দিবসের আলোচনা সভায় জেলা প্রশাসক।। আসুন আমরা নীতি-নৈতিকতা দিয়ে এই সমাজ-দেশকে সুন্দর করে গড়ে তুলি টেকনাফে হ্নীলা নিখোঁজ শিশু কন্যার মৃতদেহ পুকুর থেকে উদ্ধার, আটক- ৬ বেতাগীতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে স্বাস্থ্যসহকারীরা এদেশে সংখ্যালঘু বলতে কোন শব্দ নেই,আমরা সবাই বাঙালী— নূরুল ইসলাম মনি

ঈদের সেকাল-একাল

১৫-২০ টাকায় খাসি, ৮০-১০০ টাকায় গরু কিনে কোরবানি হতো

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:৫৬:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ জুন ২০২৫ ১১২ বার পড়া হয়েছে
Jbangla.com অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শৈশবের ঈদ মানেই ছিল আনন্দ। পুরো গ্রামের মানুষ মিলে আনন্দ করতাম। ৮০ থেকে ১০০ টাকায় গরু কিনে কোরবানি করা হতো ৭ থেকে ৮ পরিবার মিলে। সে সময়ের ৮০ থেকে ১০০ টাকার গরু বর্তমানে দেড় থেকে দুই লাখে টাকায় বিক্রি হয়। গরু কোরবানি শেষে বিকেলে বাউল-ভাটিয়ালিগানের আয়োজন হতো।

জীবনের ৮০ বছর পার করে শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের ঈদগুলোর কথা মনে পড়ে। এখন থাকি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার টিঅ্যান্ডটি রোডের বাড়িতে। আছেন স্ত্রী, সন্তান ও নাতিরা। বাবা আবদুল লতিফ ধোবাউড়ার কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর পাকিস্তানিদের গুলিতে নিহত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭০ সালে স্নাতকোত্তর পাস করে ১৯৭৪ সালে ঈশ্বরগঞ্জ কলেজে প্রভাষক হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে যোগ দিই। ২০০৮ সালে অবসরে গেছি।

ষাটের দশকের কথা। তখন আমার স্কুলশিক্ষক বাবা ৩২ টাকা ৫০ পয়সা বেতন পেতেন। কোরবানির ঈদে ১৫ থেকে ২০ টাকায় খাসি কেনা হতো। সচ্ছল ৭ থেকে ৮ পরিবার মিলে ৮০ থেকে ১০০ টাকায় গরু কোরবানি দেওয়া হতো। ঈদের দিন ঘুম থেকে উঠে গোসল সেরে ঈদগাহে নামাজে যেতাম। বড়দের সালাম করলে সিকি, আধুলি সালামি পেতাম। আমাদের ছেলেবেলায় মা-চাচিরা ঈদের জন্য হাতে সেমাই বানাতেন দুই দিন আগে থেকেই। কিন্তু এখন বাজার থেকে কিনে আনা সেমাই ঝটপট রান্না হয়। হাতে তৈরি সেমাইয়ের মধ্যে যে আবেগ জড়িয়ে থাকত, তা এখনকার প্রজন্ম উপলব্ধি করতে পারবে না। সকাল সকাল কোরবানি হতো। মাংস কাটার পর প্রতিবেশীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাংস দিয়ে আসতাম। কৃষিনির্ভর গ্রামীণ জীবন থাকলেও সচ্ছল পরিবারগুলো কোরবানি দিত।

আমাদের গ্রামের বাড়ি ছিল ভারতের সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত গ্রামে। ঈদের দিন বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরতাম। এলাকায় বাউল, ভাটিয়ালি ও ভাইওয়াগানের আসর বসত। তখন টিভি ও এখনকার মতো মুঠোফোন ছিল না। বিনোদন ছিল লোকজ গান। ঈদ উপলক্ষে বিশেষ সিনেমা চলত ময়মনসিংহ শহরের অলকা সিনেমা হলে। যখন হাইস্কুলে পড়ি, ধোবাউড়া থেকে ময়মনসিংহ শহরে বন্ধুদের সঙ্গে সিনেমা দেখতে আসতাম। তখন খুবই আনন্দ হতো।

আমাদের শৈশব-কৈশোরে আত্মীয়স্বজনের পাশাপাশি সামাজিক বন্ধনগুলো খুব মজবুত ছিল। আমরা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যেতাম। কিন্তু এখন ঈদ ফিকে মনে হয়। সব আছে, কিন্তু আনন্দ নেই। আগে লোকদেখানো ছিল না, এখন মনে হয় সব লোকদেখানো।

যে আমি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় কয়েকজন মিলে গরু কেনা দেখেছি, সে আমার পরিবার এবার ৯০ হাজার টাকায় গরু কিনেছি। গত কয়েক বছরের তুলনায় দাম অনেক কম। সামাজিক বন্ধন যদি বাড়ত, উৎসবে মানুষের আনন্দ আরও বাড়ত।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ঈদের সেকাল-একাল

১৫-২০ টাকায় খাসি, ৮০-১০০ টাকায় গরু কিনে কোরবানি হতো

আপডেট সময় : ১২:৫৬:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ জুন ২০২৫

শৈশবের ঈদ মানেই ছিল আনন্দ। পুরো গ্রামের মানুষ মিলে আনন্দ করতাম। ৮০ থেকে ১০০ টাকায় গরু কিনে কোরবানি করা হতো ৭ থেকে ৮ পরিবার মিলে। সে সময়ের ৮০ থেকে ১০০ টাকার গরু বর্তমানে দেড় থেকে দুই লাখে টাকায় বিক্রি হয়। গরু কোরবানি শেষে বিকেলে বাউল-ভাটিয়ালিগানের আয়োজন হতো।

জীবনের ৮০ বছর পার করে শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের ঈদগুলোর কথা মনে পড়ে। এখন থাকি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার টিঅ্যান্ডটি রোডের বাড়িতে। আছেন স্ত্রী, সন্তান ও নাতিরা। বাবা আবদুল লতিফ ধোবাউড়ার কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর পাকিস্তানিদের গুলিতে নিহত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭০ সালে স্নাতকোত্তর পাস করে ১৯৭৪ সালে ঈশ্বরগঞ্জ কলেজে প্রভাষক হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে যোগ দিই। ২০০৮ সালে অবসরে গেছি।

ষাটের দশকের কথা। তখন আমার স্কুলশিক্ষক বাবা ৩২ টাকা ৫০ পয়সা বেতন পেতেন। কোরবানির ঈদে ১৫ থেকে ২০ টাকায় খাসি কেনা হতো। সচ্ছল ৭ থেকে ৮ পরিবার মিলে ৮০ থেকে ১০০ টাকায় গরু কোরবানি দেওয়া হতো। ঈদের দিন ঘুম থেকে উঠে গোসল সেরে ঈদগাহে নামাজে যেতাম। বড়দের সালাম করলে সিকি, আধুলি সালামি পেতাম। আমাদের ছেলেবেলায় মা-চাচিরা ঈদের জন্য হাতে সেমাই বানাতেন দুই দিন আগে থেকেই। কিন্তু এখন বাজার থেকে কিনে আনা সেমাই ঝটপট রান্না হয়। হাতে তৈরি সেমাইয়ের মধ্যে যে আবেগ জড়িয়ে থাকত, তা এখনকার প্রজন্ম উপলব্ধি করতে পারবে না। সকাল সকাল কোরবানি হতো। মাংস কাটার পর প্রতিবেশীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাংস দিয়ে আসতাম। কৃষিনির্ভর গ্রামীণ জীবন থাকলেও সচ্ছল পরিবারগুলো কোরবানি দিত।

আমাদের গ্রামের বাড়ি ছিল ভারতের সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত গ্রামে। ঈদের দিন বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরতাম। এলাকায় বাউল, ভাটিয়ালি ও ভাইওয়াগানের আসর বসত। তখন টিভি ও এখনকার মতো মুঠোফোন ছিল না। বিনোদন ছিল লোকজ গান। ঈদ উপলক্ষে বিশেষ সিনেমা চলত ময়মনসিংহ শহরের অলকা সিনেমা হলে। যখন হাইস্কুলে পড়ি, ধোবাউড়া থেকে ময়মনসিংহ শহরে বন্ধুদের সঙ্গে সিনেমা দেখতে আসতাম। তখন খুবই আনন্দ হতো।

আমাদের শৈশব-কৈশোরে আত্মীয়স্বজনের পাশাপাশি সামাজিক বন্ধনগুলো খুব মজবুত ছিল। আমরা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যেতাম। কিন্তু এখন ঈদ ফিকে মনে হয়। সব আছে, কিন্তু আনন্দ নেই। আগে লোকদেখানো ছিল না, এখন মনে হয় সব লোকদেখানো।

যে আমি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় কয়েকজন মিলে গরু কেনা দেখেছি, সে আমার পরিবার এবার ৯০ হাজার টাকায় গরু কিনেছি। গত কয়েক বছরের তুলনায় দাম অনেক কম। সামাজিক বন্ধন যদি বাড়ত, উৎসবে মানুষের আনন্দ আরও বাড়ত।