প্রস্তুত রাজধানীর পশুর হাট, ভালো ব্যবসার আশা পাইকারদের
- আপডেট সময় : ০৬:৩৯:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫ ১২৩ বার পড়া হয়েছে

পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রাজধানীর পশুর হাটগুলোর প্রস্তুতি একেবারে শেষ দিকে। সারাদেশ থেকে খামারিরা পর্যায়ক্রমে হাটে গরু তুলছেন। তবে সিটি করপোরেশনের দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী মঙ্গলবার থেকে হাটের মূল কর্যক্রম শুরু হবে। প্রায় সব কটি অস্থায়ী পশুর হাটের ইজারা কার্যক্রম শেষ করতে না পারলেও সম্ভাব্য ইজারাদাররা হাট বসানোর প্রস্তুতি শেষ করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রাবাড়ী থানাধীন দনিয়া কলেজ সংলগ্ন খালি জায়গা ও শ্যামপুর থানাধীন পোস্তগোলা শ্মশানঘাটের পশ্চিম পাশের নদীর পাড়ে খালি জায়গায় পশুর হাটের সার্বিক প্রস্তুতি শেষের দিকে। এখন সারাদেশের গুরু আসার অপেক্ষা ইজারাদারদের।
এদিকে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির ফলে মাঠগুলোতে পানি পড়ে স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গেছে। তবে হাট কর্তৃপক্ষ বালি ফেলে গরু রাখার উপযোগী করে তুলছেন মাঠ৷ উপরে ত্রিপল টানাচ্ছেন যেন ক্রেতারা স্বস্তিতে হাট ঘুরে পছন্দের পশু কিনতে পারেন।
এবার রাজধানীর অস্থায়ী ২১টি কোরবানি পশুর হাট বসার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় দুটি হাট নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। দক্ষিণ সিটির আফতাবনগর ও মেরাদিয়া এলাকা জনবহুল স্থানে হওয়ায় হাট বসাতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট।
ফলে উত্তরে ১০টি ও দক্ষিণে নয়টি হাট বসানোর সিদ্ধান্ত হয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকাধীন ১০টির ইজারা চূড়ান্ত হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় চূড়ান্ত হয়েছে ছয়টি হাট। আরও তিনটি হাট বসানোর পরিকল্পনা থাকলেও তিনবার দরপত্র আহ্বান করেও কাঙ্ক্ষিত দর না পাওয়ায় তা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইশরাক হোসেনের মেয়রের শপথ পড়ানোর দাবিতে সমর্থকদের আন্দোলনের কারণে একপ্রকার অচল হয়ে পড়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির নগর ভবন। ফলে নগর ভবন ও স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
তবে সম্ভাব্য ইজারাদাররা আশা করছেন স্থানীয় সরকার বিভাগ দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্র জানায়, নয়টি হাটের মধ্যে পাঁচটি হাটের ইজারা প্রক্রিয়া প্রায় শেষের দিকে। কেবল কার্যাদেশ দেওয়া বাকি। বাকি চারটির জন্য দুই দফায় দরপত্র আহ্বান করেও ইজারাদার চূড়ান্ত করা যায়নি। সবশেষ তৃতীয় দফার দরপত্র জমার সময়সীমাও গত বৃহস্পতিবার পার হয়েছে। এই চারটি হাট হলো– দনিয়া কলেজের পাশে খালি জায়গা, কমলাপুর সাদেক হোসেন খোকা মাঠের খালি জায়গা ও ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল হাট, ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের খালি জায়গা এবং শ্যামপুর কদমতলী ট্রাক স্ট্যান্ড-সংলগ্ন খালি জায়গা। বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভে নগর ভবন তালাবদ্ধ থাকায় ইজারা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
তবে দনিয়া কলেজ সংলগ্ন পশুর হাটের সম্ভাব্য ইজারাদার তারিকুল ইসলাম তারেক বলেন, আমরা দনিয়া কলেজ সংলগ্ন হাটের ইজারা নিয়েছি। ইতোমধ্যে টাকাও জমা করেছি। আমাদের যাবতীয় প্রস্তুতিও সম্পন্ন। খামারি ও পাইকাররা গরু নিয়ে আসছেন।
পশুর হাটের ইজারা চূড়ান্ত বা ওয়ার্ক অর্ডারের বিষয়ে ডিএসসিসির প্রশাসক শাহজাহান মিয়া বলেন, চলমান প্রশাসনিক অচলাবস্থায় কয়েক দিন ধরে আমরা কোনো সেবা দিতে পারছি না। এমনকি আমাদের ফাইলও দেখতে পারছি না। অবরোধের কারণে, আমরা পশুর হাটের ইজারা চূড়ান্ত করতে বা ওয়ার্ক অর্ডার দিতে পারছি না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দনিয়া কলেজের পূর্ব পার্শ্বে ও ছনটেক মহিলা মাদরাসার পূর্ব পশ্চিমের খালি জায়গার ইজারা মূল্য চার কোটি ৭২ লাখ টাকা হলেও কাঙ্ক্ষিত দর পাওয়া যায়নি। যদিও সম্ভাব্য ইজারাদার তরিকুল ইসলাম তারেক স্থানীয় সরকার বিভাগের সাথে সমঝোতায় আসছেন।
এদিকে পোস্তগোলা শ্মশানঘাটের পশ্চিম পাশের নদীর পাড়ে খালি জায়গার হাট মুহাম্মদ আলী মিলন দুই কোটি ৭০ লাখ ৫০ হাজার টাকা সর্বোচ্চ দর দেন।
শুক্রবার দনিয়া, কাজলা, শনির আখড়া এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হাটের প্রস্তুতি ৯০ শতাংশ হয়েছে। সারাদেশের খামারিরা ও পাইকাররা পালাক্রমে ট্রাক থেকে গরু নামাচ্ছেন। তবে এখনো হাট জমে ওঠেনি; বেচাকেনা নেই বললেই চলে৷ হাট জমতে আরও দুই থেকে তিন দিন লাগতে পারে বলে জানান ব্যবসায়ীরাা।
ব্যবসায়ীরা জানান, এখনো সব গরু আসতে দুই তিন দিন সময় লাগবে৷ এবার গরুর সংকট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গত বছর লোকসান হকেও এবার ভালো ব্যবসার আশা করছেন কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ী সেকান্দর আলী। তিনি বলেন, গতবার লসে গরু বিক্রি করেছি। এবার আশা করছি লাভ করব। তিনি বলেন, বড় গরুর চেয়ে মাঝারি আর ছোট আকারের গরুর প্রতি আগ্রহ সবার। ২৩টি গরু কুষ্টিয়া থেকে এনেছি। ইতোমধ্যে দুটি বিক্রি করেছি। রোববার থেকে ক্রেতা আরও বাড়বে আশা করি।
গরুর ব্যবসায়ী হাসান মাহমুদ সুজন বলেন, পশুখাদ্যের দর বেড়ে যাওয়ায় গতবারের তুলনায় কিছুটা চড়া দামে কিনেছি। ফলে দাম একটু বেশি এবার।
হাটের সার্বিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যবিধি, ভেটেরিনারি সেবা এবং ক্রেতা-বিক্রেতার সুবিধার্থে নেওয়া হয়েছে একাধিক ব্যবস্থা।
হাটের অবকাঠামো
হাটের মাঠ প্রস্তুত করতে ইতোমধ্যেই মাটি ভরাট, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ও টিনের ছাউনি বসানো সম্পন্ন হয়েছে। প্রতি হাটেই রয়েছে আলাদা প্রবেশ ও প্রস্থানের গেট, যাতে ভিড় কম হয় এবং জনসাধারণ নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে।
হাটগুলোতে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্থাপন করা হয়েছে অস্থায়ী প্রশাসনিক কন্ট্রোল রুম, মোবাইল টয়লেট, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা এবং নির্দিষ্ট নামাজের জায়গা।
স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা: প্রতিটি হাটে ভেটেরিনারি টিম নিয়োজিত থাকবে যারা গরুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবে এবং অসুস্থ পশু হাটে প্রবেশ করতে দেবে না। এছাড়া হাটকেন্দ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডিএসসিসি, মহানগর পুলিশ ও র্যাব একযোগে কাজ করছে। প্রতিটি হাটে থাকছে পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ সদস্য, সাদা পোশাকের গোয়েন্দা বাহিনী ও ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার টিম।
এছাড়া বিক্রেতা ও ক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রতিটি হাটে থাকবে ‘সিকিউরিটি বুথ’, যেখানে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা, ছিনতাই বা প্রতারণার ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মোবাইল কোর্ট টিমও প্রস্তুত থাকবে প্রতারণা বা মূল্য কারসাজির বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে.
পরিবহন ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ: ট্রাফিক পুলিশ পৃথক রুট প্ল্যান তৈরি করেছে যাতে যানজট না হয়। পশুবাহী ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহনের জন্য নির্ধারিত গেট এবং আলাদা পার্কিং এরিয়া করা হয়েছে।
কী বলছেন স্থানীয়রা
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এবার হাট ব্যবস্থাপনায় কিছুটা শৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে। তবে তারা আশাবাদী যে, হাট চলাকালীন ধুলাবালি, শব্দদূষণ এবং পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।
দনিয়া কলেজ মাঠের ইজারাদার তারিকুল ইসলাম জানান, ক্রেতা ও ব্যাপারীদের সুবিধার্থে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। পাইকারদের থাকার ব্যবস্থা, সার্বক্ষণিক ব্যাংকি সুবিধা, ২৪ ঘণ্টা পশুর ডাক্তার, জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিন সুবিধা, প্রশাসনিক নিরাপত্তাসহ সব ধরনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।
যাত্রাবাড়ী ও পুরান ঢাকার কোরবানির পশুর হাট দুটিকে ঘিরে প্রশাসনের সার্বিক প্রস্তুতি, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা এবং ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা ঈদুল আজহার আগে রাজধানীবাসীকে কিছুটা স্বস্তি দেবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তবে বাস্তব পরিস্থিতিতে এই পরিকল্পনা কতটা কার্যকর হয়, তা সময়ই বলে দেবে।
ইজারাদার কর্তৃপক্ষগুলো জানিয়েছে, হাটে পশু বেচাকেনা এখনও পুরোপুরি শুরু হয়নি। তারা আশা করছেন, রোববার থেকে বিক্রি শুরু হবে।
দাম ও বিক্রয় পরিস্থিতি
ব্যাপারীরা এবার দাম ছাড়ছেন না। তারা এলোমেলো দাম চাইছেন। প্রকৃত দামটা বোঝা যাবে আরও একদিন পর।
সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হাট পরিচালনায় কোনো ধরনের অনিয়ম হলে ইজারাদারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া, হাটে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জোর তদারকি করা হবে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
হাটের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা নিয়োজিত থাকবেন। যাত্রাবাড়ী ও শ্মশান ঘাট হাটের জন্য আলাদা জনবল ও যান-যন্ত্রপাতি নিশ্চিত করা হয়েছে। হাটের বর্জ্য দ্রুততম সময়ে সরিয়ে নিতে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা এবং হাটের ইজারাদারদের সঙ্গে সভা করা হবে।
























