ঢাকা ১২:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
রাজাপুরে নানা আয়োজনে কৈবর্ত খালি ব্লাড ডোনেশনক্লাবের ৫ ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিক উদযাপন  কেশবপুরে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের  সরেজমিন পরিদর্শন অস্ত্র গোলাবারুদ সহ দুলাভাই ডাকাত বাহিনীর সদস্যকে আটক করেছে কোস্ট গার্ড খুলনা রুপসায় দেশের প্রয়োজনে গনতন্ত্র রক্ষার সার্থে বিএনপিকে সরকার গঠনে ভোট দিবে জনগণ উপজেলা প্রেসক্লাব দিঘলিয়ার সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত শরণখোলায় ড:এ.বি.এম. ওবায়দুল ইসলামের উপস্থিতিতে তারেক রহমানের ৩১ দফা নিয়ে আলোচনা ও জনসভা অনুষ্ঠিত বাগেরহাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠকের পদত্যাগ কচুয়ায় বিএনপির পক্ষ থেকে ৩১ দফা সম্বলিত লিফলেট বিতরণ দিঘলিয়া উপজেলা যুবদলের জরুরী বর্ধিত সভা এবং আনন্দ মিছিল অনুষ্ঠিত পিরোজপুর ২ আসনের ধানের শীষের কান্ডারী হলেন আহমেদ সোহেল মঞ্জুর

জীবিত ব্যক্তিকে জুলাই আন্দোলনে ‘শহীদ’ দেখিয়ে হত্যা মামলা!

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৬:১৬:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫ ১২৪ বার পড়া হয়েছে
Jbangla.com অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ঢাকার যাত্রাবাড়ি থানায় জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় একটি হত্যা মামলায় মৃত হিসেবে উল্লেখ করা হয় সুলাইমান সেলিম নামে এক ব্যাক্তিকে। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানা পুলিশ যখন ঠিকানা যাচাই করতে যান তখনই সেলিম জানতে পারে তাকে মৃত দেখিয়ে হত্যা মামলা করা হয়েছে। এ নিয়ে বিবিসি বাংলা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া এলাকার বাসিন্দা সোলায়মান সেলিম, জুলাই আন্দোলনে তাকে মৃত দেখিয়ে দায়ের করা হয় হত্যা মামলা। সেলিম আর্তনাদের সুরে বলে উঠেন, ‘খুব কষ্ট, খুব কষ্ট ভিতরে। যদি বুক ছিড়া দেখাইবার পারতাম আমি জীবিত থাকতে মৃত… হামার বড় ভাইয়ে দেখাইছে বাংলাদেশের সরকাররে… আমি মারা গেছি। এর থেকে দুঃখ কী আছে পৃথিবীতে?’

তিনি বলেন, ‘৩ আগস্ট, ছাত্র আন্দোলনের সময় যাত্রাবাড়ি কাজলা এলাকায় বলে মারা গেছি। কউ গুলি খাইয়া বলে মারা গেছি।’

আপনিই যে সে সেলিম সেটা নিশ্চিত তো? এমন প্রশ্নের উত্তরে সুলাইমান সেলিম বলেন, ‘হ্যা, নিশ্চিত। এর মাঝখানে যদি মাইরা ফেলত পুলিশ জানার আগে তাইলে তো আমি সরকারি লাশ হইয়া যাইতাম।’ বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন, ভুক্তভোগী সেলিম।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গতবছর ৩১ আগস্ট উক্ত মামলাটি করেন সেলিমের আপন ভাই মোস্তফা কামাল। সাক্ষী হিসাবে থাকা দুজনের নামও তার আরও দুই ভাইয়ের সঙ্গে মিলে যায়। নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে তিনি ঢাকার আদালত, ডিবি অফিস ও থানায় পাঁচবার হাজিরা দিয়েছেন।

ভুক্তভোগী বলেন, ‘চারবার গেছি যাত্রাবাড়ি আর একবার গেছি ডিবি অফিসে। এই মামলাটা করছে শুধু আমাকে মারার জন্য যদি এর মাঝখানে আমাকে মাইরা ফেলতে পারত তাহলে অই যাগরে আসামি করছিল ৪১ জন আর অজ্ঞাত এক দেড়শ জন, তারা অযথা জেল খাটত।’

এদিকে সেলিম জানান, তিনি প্রাণভয়ে দিন কাটাচ্ছেন। ফুলবাড়িয়ার ধামরে এই ঘটনা চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। জুলাই আন্দোলনকে ব্যবহার করে এমন হত্যা মামলা নিয়ে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যাত্রাবাড়ি থানার ওই মামলার প্রধান আসামি শেখ হাসিনা। এছাড়া ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ৪১ জনের নাম দেয়া হয়েছে। এছাড়াও অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের আরও দেড় থেকে দুইশ নেতা-কর্মীকে।

যাত্রাবাড়ি থানায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, মোস্তফা কামালের মামলাটি রুজু অবস্থায় রয়েছে এবং গোয়েন্দা সংস্থা ডিবি মামলাটির তদন্ত করছে।

ডিবির তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মামলার বাদী এখন পলাতক। সেলিম জীবিত কি না তা নিশ্চিত হতে আদালত ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন।

‘একজন জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে তারই আত্মীয়-স্বজন মামলা করছেন এটি কল্পনার বাইরে। এটি সরাসরি জুলাই-আগস্টের শহীদদেরকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ার মতো ঘটনা’, বলেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন।

জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে দেড় হাজারের মতো মামলা হয়েছে বলে পুলিশ সদরদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। এর মধ্যে প্রায় ৬০০টি হত্যা মামলা। এসব মামলা তদন্তে মনিটরিং করার কথাও জানিয়েছিল পুলিশ। মানবাধিকারকর্মী এবং আইনজীবীরা বলছেন, উদ্দেশ্যমূলক মামলা ও এ ধরণের মামলার কারণে জনমনে প্রশ্ন তৈরি হবে।

মানবাধিকারবিষয়ক আইনজীবী এলিনা খান বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক একটা বিষয়, ৫ আগস্টের আগে যে ঘটনাগুলো আগে ঘটেছে হাসিনা সরকারের সময় তখন কিন্তু আমরা অনেকসময় বলেছি যে মিথ্যা মামলা, হয়রানি… হাজার হাজার লোক সাফার করেছে বিভিন্ন দলের বিভিন্ন লোক। ঠিক সেটাই যদি আবার পুনরাবৃত্তি হয়, তাহলে তা খুবই দুঃখজনক একটা বিষয়।’

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

জীবিত ব্যক্তিকে জুলাই আন্দোলনে ‘শহীদ’ দেখিয়ে হত্যা মামলা!

আপডেট সময় : ০৬:১৬:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫

ঢাকার যাত্রাবাড়ি থানায় জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় একটি হত্যা মামলায় মৃত হিসেবে উল্লেখ করা হয় সুলাইমান সেলিম নামে এক ব্যাক্তিকে। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানা পুলিশ যখন ঠিকানা যাচাই করতে যান তখনই সেলিম জানতে পারে তাকে মৃত দেখিয়ে হত্যা মামলা করা হয়েছে। এ নিয়ে বিবিসি বাংলা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া এলাকার বাসিন্দা সোলায়মান সেলিম, জুলাই আন্দোলনে তাকে মৃত দেখিয়ে দায়ের করা হয় হত্যা মামলা। সেলিম আর্তনাদের সুরে বলে উঠেন, ‘খুব কষ্ট, খুব কষ্ট ভিতরে। যদি বুক ছিড়া দেখাইবার পারতাম আমি জীবিত থাকতে মৃত… হামার বড় ভাইয়ে দেখাইছে বাংলাদেশের সরকাররে… আমি মারা গেছি। এর থেকে দুঃখ কী আছে পৃথিবীতে?’

তিনি বলেন, ‘৩ আগস্ট, ছাত্র আন্দোলনের সময় যাত্রাবাড়ি কাজলা এলাকায় বলে মারা গেছি। কউ গুলি খাইয়া বলে মারা গেছি।’

আপনিই যে সে সেলিম সেটা নিশ্চিত তো? এমন প্রশ্নের উত্তরে সুলাইমান সেলিম বলেন, ‘হ্যা, নিশ্চিত। এর মাঝখানে যদি মাইরা ফেলত পুলিশ জানার আগে তাইলে তো আমি সরকারি লাশ হইয়া যাইতাম।’ বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন, ভুক্তভোগী সেলিম।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গতবছর ৩১ আগস্ট উক্ত মামলাটি করেন সেলিমের আপন ভাই মোস্তফা কামাল। সাক্ষী হিসাবে থাকা দুজনের নামও তার আরও দুই ভাইয়ের সঙ্গে মিলে যায়। নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে তিনি ঢাকার আদালত, ডিবি অফিস ও থানায় পাঁচবার হাজিরা দিয়েছেন।

ভুক্তভোগী বলেন, ‘চারবার গেছি যাত্রাবাড়ি আর একবার গেছি ডিবি অফিসে। এই মামলাটা করছে শুধু আমাকে মারার জন্য যদি এর মাঝখানে আমাকে মাইরা ফেলতে পারত তাহলে অই যাগরে আসামি করছিল ৪১ জন আর অজ্ঞাত এক দেড়শ জন, তারা অযথা জেল খাটত।’

এদিকে সেলিম জানান, তিনি প্রাণভয়ে দিন কাটাচ্ছেন। ফুলবাড়িয়ার ধামরে এই ঘটনা চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। জুলাই আন্দোলনকে ব্যবহার করে এমন হত্যা মামলা নিয়ে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যাত্রাবাড়ি থানার ওই মামলার প্রধান আসামি শেখ হাসিনা। এছাড়া ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ৪১ জনের নাম দেয়া হয়েছে। এছাড়াও অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের আরও দেড় থেকে দুইশ নেতা-কর্মীকে।

যাত্রাবাড়ি থানায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, মোস্তফা কামালের মামলাটি রুজু অবস্থায় রয়েছে এবং গোয়েন্দা সংস্থা ডিবি মামলাটির তদন্ত করছে।

ডিবির তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মামলার বাদী এখন পলাতক। সেলিম জীবিত কি না তা নিশ্চিত হতে আদালত ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন।

‘একজন জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে তারই আত্মীয়-স্বজন মামলা করছেন এটি কল্পনার বাইরে। এটি সরাসরি জুলাই-আগস্টের শহীদদেরকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ার মতো ঘটনা’, বলেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন।

জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে দেড় হাজারের মতো মামলা হয়েছে বলে পুলিশ সদরদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। এর মধ্যে প্রায় ৬০০টি হত্যা মামলা। এসব মামলা তদন্তে মনিটরিং করার কথাও জানিয়েছিল পুলিশ। মানবাধিকারকর্মী এবং আইনজীবীরা বলছেন, উদ্দেশ্যমূলক মামলা ও এ ধরণের মামলার কারণে জনমনে প্রশ্ন তৈরি হবে।

মানবাধিকারবিষয়ক আইনজীবী এলিনা খান বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক একটা বিষয়, ৫ আগস্টের আগে যে ঘটনাগুলো আগে ঘটেছে হাসিনা সরকারের সময় তখন কিন্তু আমরা অনেকসময় বলেছি যে মিথ্যা মামলা, হয়রানি… হাজার হাজার লোক সাফার করেছে বিভিন্ন দলের বিভিন্ন লোক। ঠিক সেটাই যদি আবার পুনরাবৃত্তি হয়, তাহলে তা খুবই দুঃখজনক একটা বিষয়।’