নরসিংদীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত হিসেবে ‘ভুয়া জুলাই যোদ্ধা’ তালিকাভুক্তির প্রতিবাদ করায় এক কলেজ শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে। আহত শিক্ষার্থী নাম মিনহাজুর রহমান শ্রাবন (১৭)। গতকাল (বৃহস্পতিবার, ৮ মে) দিবাগত রাতে পৌর শহরের বিলাসদি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পর আজ (শুক্রবার, ৯ মে) সকাল থেকেই ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।
শ্রাবণ নরসিংদী সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্র। সে বাশাইল এলাকার বাসিন্দা মানিক মিয়া ছেলে। অপরদিকে অভিযুক্তরা হলো জেলা মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইভা আলমের স্বামী ও সদর উপজেলার মেহেরপাড়া ইউনিয়নের ইউপি সচিব শাহ আলম, তার ভাই শাহেদ হোসেনসহ অন্তত ২০ জন। যারা সকলেই আওয়ামী লীগের ক্যাডার বলে এলাকায় পরিচিত।
আহত শিক্ষার্থীর সহপাঠী ও পরিবারের সদস্যরা জানায়, নরসিংদী সদরের মেহেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সচিব শাহ আলমের পরিবার দীর্ঘ বছর ধরেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘৫ আগস্টের পর জুলাই আন্দোলনে আহতদের তালিকা প্রস্তুতের সময় আন্দোলনে অংশ না নিয়েও জেলা আওয়ামী মহিলা লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক ইভা আলম ও শাহ আলম দম্পতির কন্যা রাইসা আলমের নাম জুলাই যোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। এরপর শ্রাবনসহ নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা জুলাই যোদ্ধাদের তালিকায় আওয়ামী লীগ স্বৈরাচারের দোসরদের তালিকাভুক্তি ও প্রকৃত যোদ্ধাদের নাম না আসার প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদন করে।’
সম্প্রতি বিষয়টি আলোচনায় আসলে জুলাই যোদ্ধাদের অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে আহত হিসেবে রাইসা অনুদান পায়নি বলে জানা যায়। এরপর থেকেই জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা শিক্ষার্থীদের ইভা-শাহ আলম দম্পতির পরিবার হুমকি দিয়ে আসছিল বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
সবশেষ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বন্ধুকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে নিজ বাড়ি ফেরার পথে শাহ আলম ও তার ভাই শাহেদ হোসেন দলবল নিয়ে শ্রাবণের উপর হামলা করে দেশিয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে।
পরে এলাকাবাসীর সহায়তায় তাকে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠায় জেলা হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাজিদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘শ্রাবণসহ আমরা জুলাই আন্দোলনে অংশ নিলেও রাইসা জুলাই আন্দোলনে অংশ নেয়নি। তবুও তার নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে যেকোনোভাবে। আমরা সুষ্ঠ তদন্ত করার জন্য আবেদন করেছি মাত্র। এরপর থেকেই আমিসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। আর গতরাতে আমাদের সহপাঠী এবং আন্দোলনের সহযোদ্ধা শ্রাবণকে দেশিয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা।’
এই ঘটনায় অভিযুক্ত শাহ আলম হত্যার পরিবারের কারও সাথেই যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
মামলা ও গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমদাদুল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে থানার ডিউটি অফিসারের দায়িত্বে থাকা এএসআই নজরুল জানান, এই ঘটনায় মোট চার জনকে আটক করা হয়েছে।