ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ: বাণিজ্যে বিঘ্ন ঘটবে বাংলাদেশের
- আপডেট সময় : ১০:১২:০৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ মে ২০২৫ ৮১ বার পড়া হয়েছে

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর গত প্রায় এক সপ্তাহ থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল দুই দেশের সীমান্তে। দুই দেশের মধ্যে যে কোনো মুহূর্তে যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে-এমন আশঙ্কাও করা হচ্ছিল। অবশেষ সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গতকাল রাতে ভারত পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যায়। ভারত-পাকিস্তান এই যুদ্ধ বাংলাদেশের বাণিজ্যে বিঘ্ন ঘটবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা।
তারা বলেন, এই যুদ্ধের কারণে ভারত-পাকিস্তান তো ক্ষতিগ্রস্ত হবেই, এর প্রভাব যারা প্রতিবেশী তাদের ওপরও প্রভাব পড়বে। এর প্রভাব বাংলাদেশের বাণিজ্য ও অর্থনীতির ওরও পড়বে। বাংলাদেশের সীমান্ত বাণিজ্য চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হবে, এর ফলে দ্রব্যমূল্যে বেড়ে যাবে। এ মুহূর্তে সামরিক ঝুঁকিতে না থাকলেও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও প্রফেসর ড. মাহবুবু উল্লাহ সময়ের আলোকে বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশসহ যারা প্রতিবেশী দেশ রয়েছে তার সবগুলোর ওপরই প্রভাব পড়বে। আমরা আশা করবো বড় আকারে যুদ্ধে তারা যেন না যায়। বড় আকারে যুদ্ধ গেলে যে সাপ্লাই লাইনগুলো আছে, সেগুলো আরও ব্যাহত হবে। সাপ্লাই লাইনগুলো যদি ব্যাহত হয় তাহলে আরও বড় ক্ষতি হবে। আমাদের পক্ষ থেকে আশা থাকবে, তারা যেন শান্তির পথ বেছে নেয়। তারা কূটনৈতিক আলোচনার মধ্যে তারা যেন যায়। কারণ দুটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রচুর বাণিজ্য রয়েছে। অনেক রফতানি পণ্যের কাঁচামাল আমদানি করা হয় দেশ দুটি থেকে। অনেক ভোগ্যপণ্যও আমদানি করা হয়। তাই এই যুদ্ধ যত স্বল্পকালীন হয়-ততোই বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের সব দেশের জন্যই মঙ্গল।’
এদিকে ভারত-পাকিস্তানের চলমান সংঘাত পরিস্থিতি সার্কভুক্ত দেশের অর্থনীতির জন্য হুমকি বলে দাবি বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সময়ের আলোকে বলেন, প্রতিবেশী দেশের সংঘাত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কাঁচামাল আমদানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাব এখনো বিশ্ব বয়ে বেড়াচ্ছে। কবে নাগাদ যুদ্ধ শেষ হবে, তা কেউ জানে না। এর মধ্যে আবার শুরু হলো ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ। ভারত থেকে সুতা, তুলাসহ ভোগ্যপণ্যের আমদানি হয়। এসব খাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা তাদের।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আরো বলেন, যুদ্ধ-বিগ্রহে যে দেশে হয় সেই দেশ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এর ফলে আশেপাশের দেশও কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত আমরাও হবো সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করলে সীমান্ত বাণিজ্য অনেকটা বাধাগ্রস্ত হবে। কারণ যুদ্ধের কারণে সীমান্তে অনেক কড়াকড়ি আরোপ করা হবে। এর ফলে অনেক ভোগ্যপণ্য আমদানি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এতে করে পণ্যমূল্য বেড়ে যেতে পারে। এই অবস্থা যাতে তৈরি না হয়, তার জন্য আগে থেকেই বিকল্প বাজারের সন্ধান করতে হবে।’
এ বিষয়ে বিজিএমইএ’র সাবেক সহ-সভাপতি ও আসন্ন নির্বাচনের ফোরাম প্যানেল লিডার মাহমুদ হাসান খান বাবু সময়ের আলোকে বলেন, ‘কখনোই কোনো যুদ্ধ কাম্য না। বিগত কয়েক দিন ধরেই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব লেগে ছিল, শেষ পর্যন্ত দেশ দুটি যুদ্ধে জড়িয়েই পড়েছে। এ ক্ষেত্রে একজন ব্যবসায়ী হিসাবে আমার প্রথম চাওয়া যুদ্ধটি যেন দীর্ঘস্থায়ী না হয়। কারণ যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর যদি অল্প দিনের মধ্যে যুদ্ধ থেমে যায় তাহলে বাংলাদেশ খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। বিশেষ করে আমাদের রফতানি খাতের ওপর তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। হয়তো সাময়িক কিছুদিন সীমান্ত বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হবে। অল্প দিনে যুদ্ধ থেকে গেলে সে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যাবে।’
ভারত-পাক যুদ্ধে অর্থনীতির ক্ষতি নিয়ে যা জানাল মুডিস
এদিকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক দিক থেকে পাকিস্তান বেশি ক্ষতি হবে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থা মুডিস। মুডিসের ইনভেস্টর সার্ভিসের রিপোর্টে বলা হয়েছে-এই যুদ্ধে জেরে পাকিস্তানের ইকোনমিক রিকভারি ভয়ংকর রকমের ধাক্কা খেতে পারে। অন্য দেশ থেকে আসা সাহায্য বন্ধ হলে আগামী কয়েক বছরে বিভিন্ন সংস্থার ঋণ শোধ করা ইসলামাবাদের পক্ষে আরও কঠিন হবে। তবে পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ চললে ভারতের অর্থনীতির বৃদ্ধির গতি কিছুটা কমার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে মুডিস।
যুদ্ধের কারণে দাম কমে গেল ভারতীয় রুপির
এদিকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের শুরুতেই তার আঁচ লাগতে শুরু করেছে ভারতীয় অর্থনীতিতে। ডলারের বিপরীতে দাম পড়ে গেছে ভারতীয় রুপির। গতকাল বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।
ব্রিটিশ বার্তাসংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তান ভূখণ্ডে একাধিক স্থানে হামলা চালানোর পর, নন-ডেলিভারেবল ফরোয়ার্ড (এনডিএফ) বাজারে মার্কিন ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির দাম কমে গেছে। মঙ্গলবার দিনের শেষ বেলায় যেখানে প্রতি ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রার মান ছিল ৮৪ দশমিক ৪৩ রুপি, সেখানে আজ বুধবার সকালে ৮৪ দশমিক ৬৪ থেকে ৮৪ দশমিক ৬৮ রুপিতে মিলছে এক ডলার।
উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীরে এটিই সবচেয়ে বড় হামলা। পরোক্ষভাবে পাকিস্তান এ হামলায় জড়িত, এমন অভিযোগ তুলে গত বুধবার দেশটির সঙ্গে ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে ভারত। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় দেশটি। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান। স্থগিত করে দেওয়া হয় ভারতের সঙ্গে সবরকম বাণিজ্যও।

























