ঢাকা ০৫:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
দুমকি উপজেলায়, যৌতুক মামলার প্রধান আসামি বগুড়া থেকে গ্রেপ্তার ত্রিশালে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিএনএফ শিক্ষাবৃত্তির চেক বিতরণ অনুষ্ঠিত জামালপুর পুলিশ সুপার পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যকে র‍্যাংক ব্যাজ পরিয়ে দিলেন দিনাজপুরে সকল অফিসার ইনচার্জদের বদলি উপলক্ষে বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত শিবগঞ্জে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে জামায়াত প্রার্থীর মতবিনিময় সভা মনুষ্যত্বের চর্চায় শিক্ষকতা, সত্যের সন্ধানে সাংবাদিকতা’এম নজরুল ইসলাম খান বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর জব্বারকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন গজারিয়া সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময় করেন মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী কামরুজ্জামান রতন কেশবপুরে জেন্ডার সচেতনতা ও সহিংসতা  প্রতিরোধ বিষয়ক এক দিনের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় মোরেলগঞ্জে কোরআন খতম ও দোয়া অনুষ্ঠিত

ভারতের গণমাধ্যম বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে মুসলিমদের বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৪:৩৫:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫ ৭৮ বার পড়া হয়েছে
Jbangla.com অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনার পর থেকে ভারতের পক্ষপাতদুষ্টু এক শ্রেণির গণমাধ্যম।

 

দেশটির এসব গণমাধ্যমে ভুক্তভোগীদের বরাত দিয়ে দাবি করা হয়, পেহেলগামে বন্দুকধারীরা পর্যটকদের ধর্মীয় পরিচয় জিজ্ঞেস করে হত্যা করেছে।

 

যার অর্থ, নির্দিষ্টভাবে শুধু হিন্দুদেরকেই এই হামলায় লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এমন সংবাদ প্রচারের ফলে দেশটিতে মুসলিমদের জীবনে অন্ধকার নেমে এসে গেছে।

 

সম্প্রতি ইন্ডিয়া হেট ল্যাব (আইএইচএল) নামের একটি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২২ এপ্রিল থেকে ২ মের মধ্যে ভারতের নয়টি রাজ্য এবং জম্মু ও কাশ্মীরে মোট ৬৪টি সরাসরি ঘৃণামূলক বক্তব্যের ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে মহারাষ্ট্রে সর্বোচ্চ সংখ্যক ঘটনা ঘটেছ।

 

এই ঘটনাগুলো পেহেলগামে হামলার পর সংঘটিত হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, হিন্দু কট্টর ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলো মুসলিমদের লক্ষ্য করে দেশব্যাপী ঘৃণা ও ভীতিকর প্রচারণার এই ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেছে।

 

আইএইচএল-এর প্রতিবেদনে জানা যায়, এই মিছিলগুলোর বেশিরভাগই আয়োজন করেছে হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলো, যার মধ্যে রয়েছে- বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি), বজরং দল, আন্তর্জাতিক হিন্দু পরিষদ (এএইচপি), জাতীয় বজরং দল (আরবিডি), হিন্দু জনজাগৃতি সমিতি, সকল হিন্দু সমাজ, হিন্দু রাষ্ট্র সেনা এবং হিন্দু রক্ষা দল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এই গোষ্ঠীগুলো সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উসকে দিতে এবং সহিংসতা, সামাজিক বর্জন ও অর্থনৈতিক বয়কটের ডাক দেওয়ার জন্য পেহেলগাম ট্র্যাজেডিকে ব্যবহার করছে।’

 

মুসলিমদের উদ্দেশ্য করে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ানো বক্তব্য দেওয়া হয়েছে মহারাষ্ট্রে। ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) শাসিত এই রাজ্য এমন ১৭টি ঘটনা ঘটেছে।

 

এরপর উত্তর প্রদেশে ১৩টি, উত্তরাখণ্ডে ৬টি, হরিয়ানায় ৬টি, রাজস্থানে ৫টি, মধ্যপ্রদেশে ৫টি, হিমাচল প্রদেশে ৫টি, বিহারে ৪টি, এবং ছত্তিশগড়ে ২টি ঘৃণামূলক বক্তব্যের ঘটনা পরিলক্ষিত হয়েছে।

 

প্রতিবেদন অনুসারে, এসব অনুষ্ঠানে বক্তারা নিয়মিতভাবে মুসলমানদের ‘সবুজ সাপ’, ‘কীটপতঙ্গ’, এবং ‘পাগলা কুকুর’ বলে অবমাননাকর ভাষায় আক্রমণ করেছেন। অনেক ক্ষেত্রেই বক্তারা সহিংসতা উসকে দিয়েছেন এবং মুসলমানদের এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।

 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৩ থেকে ২৯ এপ্রিলের মধ্যে উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, বিহার, হিমাচল প্রদেশ এবং মহারাষ্ট্রে একাধিক ঘৃণামূলক বক্তব্যের ঘটনা ঘটেছে।

 

মুসলিমবিরোধী মিছিলে এসব মিছিলে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির বিধায়ক নন্দকিশোর গুরজার এবং বিভিন্ন হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনের সদস্যরা। তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে অমানবিক সব গালি ব্যবহার করেছেন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বয়কটের আহ্বান জানিয়েছেন, সহিংসতার উসকানি দিয়েছেন এবং হিন্দুদের অস্ত্রধারণে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

 

অনেক র‍্যালিতে বক্তারা মুসলমানদের বিতাড়নের হুমকি দিয়েছেন এবং তাদেরকে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করে ষড়যন্ত্রমূলক তত্ত্ব প্রচার করেছেন।

 

প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণার চাষ শুধু মুখের কথাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ভারতের বিভিন্ন অংশে মুসলমানদের—বিশেষ করে কাশ্মীরিদের লক্ষ্য করে ঘৃণাপূর্ণ অপরাধ ও সহিংসতা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

যেমন হরিয়ানায় রাস্তায় মুসলিম হকারদের ওপর হামলা ও তাদের পণ্যসামগ্রীতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। হামলার শিকার হয়েছেন কাশ্মীরি শাল বিক্রেতারাও।

 

উত্তরাখণ্ডে মুসলিমদের প্রকাশ্য হুমকি দিয়েছেন বিজেপি নেতা। উত্তর প্রদেশে একজন মুসলিম ব্যক্তির উপর কুঠার দিয়ে নির্মম হামলার পর হামলাকারীকে বলতে শোনা গেছে, ‘ছাব্বিশজন মারা গেছে, তোমাদেরও ছাব্বিশজন মরবে।’

 

আইএইচএল-এর গবেষকরা লক্ষ্য করেছেন, এসব ঘৃণামূলক বক্তব্যের বেশিরভাগই সামাজিক মাধ্যমে লাইভ স্ট্রিম করা হয়েছে অথবা রেকর্ড করে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব বা এক্স-এর মতো সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে আপলোড করা হয়েছে।

 

ফলে মুহূর্তেই লাখো মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে মুসলিমবিরোধী বার্তা। গবেষকরা যোগ করেন, ‘এসব কন্টেন্টের দ্রুত ছড়িয়ে পড়া প্রমাণ করে যে, অনলাইনে ঘৃণার পরিবেশ এবং অফলাইনে সহিংসতার মধ্যে একটি ভয়ংকর সম্পর্ক রয়েছে।’

 

ভারত সরকার প্রতিবেশী দেশগুলোতে সংখ্যালঘুদের ইস্যু নিয়ে উচ্চবাচ্য করলেও নিজের দেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করে না।

 

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়া তো দূরের কথা–ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদদে-ই মুসলিমদের বিরুদ্ধে নিপীড়ন চালায় উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা।

 

পেহেলগাম হামলার পরই যেভাবে সাম্প্রদায়ীক বিষবাষ্প ছড়ানো শুরু করে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির পৃষ্ঠপোষকতায় চলা রিপাবলিম বাংলার মতো বেশ কিছু নিম্নমাণের গণমাধ্যম।

 

এ সব মিডিয়ায় মুসলিম ও কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক ও মনগড়া সংবাদ প্রচার করতে থাকে। কিন্তু সেদিন মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে আসা পর্যটকরা বলেছেন, কাশ্মীরি মানুষ একেকজন বজরঙ্গি ভাইজান।

 

তারা যেভাবে নিজের জীবন তুচ্ছ করে সন্ত্রাসীর বন্দুকের নলকে তুচ্ছ করে পর্যটকদের বাঁচিয়েছেন, তা কাশ্মীরিদের মতো বড় মন ও সাহসী মানূষ ছাড়া সম্ভব না। নিজেদের জীবন বিপন্ন করে তারা মেহমানদের হেফাজত করেছেন।

 

দুর্গম পাহাড় থেকে কাঁধে করে ১২ কিলোমিটার গিরিপথ বেয়ে বহু পর্যটককে নিরাপদে নামিয়ে এনেছেন। পর্যটকদের নিজেদের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন, বিনামূল্যে তাদের খাবার খাইয়েছেন।

 

হোটেল রেস্তোরাঁ ফ্রি করে দিয়েছেন পর্যটকদের জন্য। এ ক্ষেত্রে তারা কোনো হিন্দু-মুসলিম বিভেদ করেননি। অনেক পর্যটককে বিনা পয়সায় তাদের ট্যাক্সিতে করে অন্য রাজ্যে গিয়ে পোৗছে দিয়ে এসেছেন।

 

এসব পর্যটকরাই এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাশ্মীরিদের প্রসংশায় ভাষাচ্ছেন। তারা বলছেন, এতোদিন আমরা কাশ্মীরিদের বিষয়ে কিছু গণমাধ্যমের কারণে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করতাম।

 

কিন্তু পরো ঘটনাকে মনগড়া কাহিনী বানিয়ে মুসলিম বিদ্বেষী প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে বিজেপি। এ ঘটনায় চরম উৎকণ্ঠায় আছেন ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমরা।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

ভারতের গণমাধ্যম বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে মুসলিমদের বিরুদ্ধে

আপডেট সময় : ০৪:৩৫:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫

ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনার পর থেকে ভারতের পক্ষপাতদুষ্টু এক শ্রেণির গণমাধ্যম।

 

দেশটির এসব গণমাধ্যমে ভুক্তভোগীদের বরাত দিয়ে দাবি করা হয়, পেহেলগামে বন্দুকধারীরা পর্যটকদের ধর্মীয় পরিচয় জিজ্ঞেস করে হত্যা করেছে।

 

যার অর্থ, নির্দিষ্টভাবে শুধু হিন্দুদেরকেই এই হামলায় লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এমন সংবাদ প্রচারের ফলে দেশটিতে মুসলিমদের জীবনে অন্ধকার নেমে এসে গেছে।

 

সম্প্রতি ইন্ডিয়া হেট ল্যাব (আইএইচএল) নামের একটি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২২ এপ্রিল থেকে ২ মের মধ্যে ভারতের নয়টি রাজ্য এবং জম্মু ও কাশ্মীরে মোট ৬৪টি সরাসরি ঘৃণামূলক বক্তব্যের ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে মহারাষ্ট্রে সর্বোচ্চ সংখ্যক ঘটনা ঘটেছ।

 

এই ঘটনাগুলো পেহেলগামে হামলার পর সংঘটিত হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, হিন্দু কট্টর ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলো মুসলিমদের লক্ষ্য করে দেশব্যাপী ঘৃণা ও ভীতিকর প্রচারণার এই ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেছে।

 

আইএইচএল-এর প্রতিবেদনে জানা যায়, এই মিছিলগুলোর বেশিরভাগই আয়োজন করেছে হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলো, যার মধ্যে রয়েছে- বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি), বজরং দল, আন্তর্জাতিক হিন্দু পরিষদ (এএইচপি), জাতীয় বজরং দল (আরবিডি), হিন্দু জনজাগৃতি সমিতি, সকল হিন্দু সমাজ, হিন্দু রাষ্ট্র সেনা এবং হিন্দু রক্ষা দল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এই গোষ্ঠীগুলো সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উসকে দিতে এবং সহিংসতা, সামাজিক বর্জন ও অর্থনৈতিক বয়কটের ডাক দেওয়ার জন্য পেহেলগাম ট্র্যাজেডিকে ব্যবহার করছে।’

 

মুসলিমদের উদ্দেশ্য করে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ানো বক্তব্য দেওয়া হয়েছে মহারাষ্ট্রে। ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) শাসিত এই রাজ্য এমন ১৭টি ঘটনা ঘটেছে।

 

এরপর উত্তর প্রদেশে ১৩টি, উত্তরাখণ্ডে ৬টি, হরিয়ানায় ৬টি, রাজস্থানে ৫টি, মধ্যপ্রদেশে ৫টি, হিমাচল প্রদেশে ৫টি, বিহারে ৪টি, এবং ছত্তিশগড়ে ২টি ঘৃণামূলক বক্তব্যের ঘটনা পরিলক্ষিত হয়েছে।

 

প্রতিবেদন অনুসারে, এসব অনুষ্ঠানে বক্তারা নিয়মিতভাবে মুসলমানদের ‘সবুজ সাপ’, ‘কীটপতঙ্গ’, এবং ‘পাগলা কুকুর’ বলে অবমাননাকর ভাষায় আক্রমণ করেছেন। অনেক ক্ষেত্রেই বক্তারা সহিংসতা উসকে দিয়েছেন এবং মুসলমানদের এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।

 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৩ থেকে ২৯ এপ্রিলের মধ্যে উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, বিহার, হিমাচল প্রদেশ এবং মহারাষ্ট্রে একাধিক ঘৃণামূলক বক্তব্যের ঘটনা ঘটেছে।

 

মুসলিমবিরোধী মিছিলে এসব মিছিলে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির বিধায়ক নন্দকিশোর গুরজার এবং বিভিন্ন হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনের সদস্যরা। তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে অমানবিক সব গালি ব্যবহার করেছেন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বয়কটের আহ্বান জানিয়েছেন, সহিংসতার উসকানি দিয়েছেন এবং হিন্দুদের অস্ত্রধারণে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

 

অনেক র‍্যালিতে বক্তারা মুসলমানদের বিতাড়নের হুমকি দিয়েছেন এবং তাদেরকে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করে ষড়যন্ত্রমূলক তত্ত্ব প্রচার করেছেন।

 

প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণার চাষ শুধু মুখের কথাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ভারতের বিভিন্ন অংশে মুসলমানদের—বিশেষ করে কাশ্মীরিদের লক্ষ্য করে ঘৃণাপূর্ণ অপরাধ ও সহিংসতা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

যেমন হরিয়ানায় রাস্তায় মুসলিম হকারদের ওপর হামলা ও তাদের পণ্যসামগ্রীতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। হামলার শিকার হয়েছেন কাশ্মীরি শাল বিক্রেতারাও।

 

উত্তরাখণ্ডে মুসলিমদের প্রকাশ্য হুমকি দিয়েছেন বিজেপি নেতা। উত্তর প্রদেশে একজন মুসলিম ব্যক্তির উপর কুঠার দিয়ে নির্মম হামলার পর হামলাকারীকে বলতে শোনা গেছে, ‘ছাব্বিশজন মারা গেছে, তোমাদেরও ছাব্বিশজন মরবে।’

 

আইএইচএল-এর গবেষকরা লক্ষ্য করেছেন, এসব ঘৃণামূলক বক্তব্যের বেশিরভাগই সামাজিক মাধ্যমে লাইভ স্ট্রিম করা হয়েছে অথবা রেকর্ড করে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব বা এক্স-এর মতো সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে আপলোড করা হয়েছে।

 

ফলে মুহূর্তেই লাখো মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে মুসলিমবিরোধী বার্তা। গবেষকরা যোগ করেন, ‘এসব কন্টেন্টের দ্রুত ছড়িয়ে পড়া প্রমাণ করে যে, অনলাইনে ঘৃণার পরিবেশ এবং অফলাইনে সহিংসতার মধ্যে একটি ভয়ংকর সম্পর্ক রয়েছে।’

 

ভারত সরকার প্রতিবেশী দেশগুলোতে সংখ্যালঘুদের ইস্যু নিয়ে উচ্চবাচ্য করলেও নিজের দেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করে না।

 

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়া তো দূরের কথা–ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদদে-ই মুসলিমদের বিরুদ্ধে নিপীড়ন চালায় উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা।

 

পেহেলগাম হামলার পরই যেভাবে সাম্প্রদায়ীক বিষবাষ্প ছড়ানো শুরু করে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির পৃষ্ঠপোষকতায় চলা রিপাবলিম বাংলার মতো বেশ কিছু নিম্নমাণের গণমাধ্যম।

 

এ সব মিডিয়ায় মুসলিম ও কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক ও মনগড়া সংবাদ প্রচার করতে থাকে। কিন্তু সেদিন মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে আসা পর্যটকরা বলেছেন, কাশ্মীরি মানুষ একেকজন বজরঙ্গি ভাইজান।

 

তারা যেভাবে নিজের জীবন তুচ্ছ করে সন্ত্রাসীর বন্দুকের নলকে তুচ্ছ করে পর্যটকদের বাঁচিয়েছেন, তা কাশ্মীরিদের মতো বড় মন ও সাহসী মানূষ ছাড়া সম্ভব না। নিজেদের জীবন বিপন্ন করে তারা মেহমানদের হেফাজত করেছেন।

 

দুর্গম পাহাড় থেকে কাঁধে করে ১২ কিলোমিটার গিরিপথ বেয়ে বহু পর্যটককে নিরাপদে নামিয়ে এনেছেন। পর্যটকদের নিজেদের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন, বিনামূল্যে তাদের খাবার খাইয়েছেন।

 

হোটেল রেস্তোরাঁ ফ্রি করে দিয়েছেন পর্যটকদের জন্য। এ ক্ষেত্রে তারা কোনো হিন্দু-মুসলিম বিভেদ করেননি। অনেক পর্যটককে বিনা পয়সায় তাদের ট্যাক্সিতে করে অন্য রাজ্যে গিয়ে পোৗছে দিয়ে এসেছেন।

 

এসব পর্যটকরাই এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাশ্মীরিদের প্রসংশায় ভাষাচ্ছেন। তারা বলছেন, এতোদিন আমরা কাশ্মীরিদের বিষয়ে কিছু গণমাধ্যমের কারণে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করতাম।

 

কিন্তু পরো ঘটনাকে মনগড়া কাহিনী বানিয়ে মুসলিম বিদ্বেষী প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে বিজেপি। এ ঘটনায় চরম উৎকণ্ঠায় আছেন ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমরা।