ঢাকা ১২:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
জামালপুর সকল থানার অফিসার ইনচার্জগণের বিদায় সংবর্ধনা সভা অনুষ্ঠিত এনপিএসের ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে সম্মাননা স্মারক পেলেন সাংবাদিক বিশ্বজিৎ চন্দ্র সরকার কেশবপুরে যুবদল নেতা উজ্জ্বলের জানাজায়  ভাই হত্যার বিচার চাইলেন কাউন্সিলর বাবু ১১ ডিসেম্বর কৃষকদলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিক উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত গাইবান্ধা জেলার নাগরিক প্লাটফম এর সদস্যদের নাগরিকদের অধিকার ও প্রাপ্যতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগে যুবক আটক কেশবপুরের মঙ্গলকোটে সোনাতন ধর্মালম্বীদের  সাথে জামায়াতে ইসলামী প্রার্থীর মতবিনিময় মুক্তাগাছায় জনতার মুখোমুখি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ দুমকি উপজেলায়, যৌতুক মামলার প্রধান আসামি বগুড়া থেকে গ্রেপ্তার ত্রিশালে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিএনএফ শিক্ষাবৃত্তির চেক বিতরণ অনুষ্ঠিত

টাঁকা বাড় হয়, কিন্তু সেতু বড় হয়না! সিরাজুল ইসলাম

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:৫২:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫ ৮৬ বার পড়া হয়েছে
Jbangla.com অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

টাঁকা বাড় হয়, কিন্তু সেতু বড় হয়না!
সিরাজুল ইসলাম
জেলাপ্রতিনিধি,শরীয়তপুর

অনিয়ম আর লুটপাটে ৮ বছরেও শেষ হয়নি শরীয়তপুরের কীর্তিনাশা নদীর গোলাম মাওলা সেতুর নির্মাণকাজ। তিনবার পরিবর্তন হয়েছে ঠিকাদার। উপায় না পেয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন পারাপার হচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ। তবে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে কাজ শেষ করার আশ্বাস দিয়েছে এলজিইডি। ৮ বছর ধরে ঝুলে আছে মাত্র ৮০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুর নির্মাণকাজ। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনবার ঠিকাদার পরিবর্তন হয়, বাড়ানো হয় নির্মাণ খরচ। কিন্তু অনিয়ম আর লুটপাটে সম্পন্ন হয়নি কাজ। আর এর মাশুল দিতে হচ্ছে লক্ষাধিক মানুষকে। ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন ট্রলারে করে নদী পারাপার করতে হচ্ছে এলাকাবাসীর।
জানা গেছে, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার সঙ্গে ঢাকার যাতায়াত সহজ করতে ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে কীর্তিনাশা নদীর ওপর নির্মিত হয় ৮০ মিটারের ডা. গোলাম মাওলা সেতু। বিভিন্ন সময়ে বন্যার স্রোতে সেতুটির এক প্রান্ত ভেঙে গেলে ২০১৫ সালে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। পরে ২০১৭ সালে নতুন সেতু নির্মাণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেন এলজিইডি। এরপর থেকেই নানা সমস্যা দেখিয়ে কয়েক দফা বাড়ানো হয় প্রকল্পের মেয়াদ। কাজে অনীহা দেখে তিনবার পরিবর্তনও করা হয় ঠিকাদার। আর এতে সব মিলিয়ে সেতুর কাজ শেষ হয় মাত্র ৫৫ ভাগ। এরইমধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে কাজ রেখে পালিয়ে যায় সবশেষ ঠিকাদার। পরে ওই ঠিকাদার কাজ আর করবে না মর্মে এলজিইডি কর্তৃপক্ষের বরাবরে লিখিত আবেদন করেন। আবারও থেমে যায় বাকি ৪৫ ভাগ কাজ। এদিকে সেতুটির পাশেই স্থানীয়দের যাতায়াতের সুবিধার জন্য এক কোটি টাকা ব্যয় নির্মাণ হচ্ছিল ফুট ওভার ব্রিজ। দুই বছরেও শেষ হয়নি সে কাজ। নেই সে ঠিকাদারও। ফলে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষের পারাপারের জন্য নির্ভর করতে হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ ইঞ্জিন চালিত নৌকায়। এমন ভোগান্তি থেকে মুক্তি চায় স্থানীয়রা।

নদী পার হতে আসা ৬০ বছর বয়সী আয়শা খাতুন বলেন, ‘আমাদের নদী পারাপার হতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছি আমরা। অনেক সময় পানিতে পড়ে যাচ্ছি। কখন যে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে জানি না। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুটির বাকি কাজ শেষ করার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।’

নৌকায় নদী পার হচ্ছিলেন আব্দুস সালাম সরদার, তিনি সময় সংবাদকে বলেন, ‘একটা সময়ে আমরা খুব ভালোভাবেই সেতুটি দিয়ে নদী পার হতাম। স্রোতের কারণে সেতুটির একপাড় ভেঙে যাওয়ার পরে গাড়ি চলাচল নিষেধ করলেও পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতাম। কিছুটা কষ্ট হলেও সবকিছুই স্বাভাবিক লাগতো। গত কয়েক বছর ধরে পুরোনো সেতুটি সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলার পরে আমাদেরকে পারাপার হতে হচ্ছে ইঞ্জিন চালিত নৌকায়। এ এক চরম বিড়ম্বনা।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঝড়-বৃষ্টি বা প্রখর রোদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে পারাপার হতে কতটা কষ্ট হয় তা বোঝানোর উপায় নেই। হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের যেতে হয় নৌকায়। রয়েছে অনেক বৃদ্ধ নারী-পুরুষ। রয়েছে অনেক রোগী। এছাড়া ব্রিজের পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে এখন বাস স্ট্যান্ড। এই বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন অন্তত ৫০ অধিক বাস ছেড়ে যায় ঢাকার উদ্দেশ্যে। এর ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ যাত্রী নদীর পূর্বপাড়ের। প্রত্যেক যাত্রীকেই পার হতে হয় এই ইঞ্জিন চালিত নৌকা করে। তাদের হাতে থাকা ব্যাগ, ছোট ছোট শিশু ও গুরুত্বপূর্ণ সব কিছুই পার করতে হয় নৌকায় করে। বলতে গেলে বাসে ওঠার জন্য নদীর পূর্ব পাড় থেকে পশ্চিম পাড়ে আসা যেন এক ভিন্ন যুদ্ধ। আব্দুস সালাম সরদার বলেন, ‘সরকারিভাবে নতুন সেতুর ৫৫ ভাগ কাজ হলেও এখনও পর্যন্ত ৪৫ ভাগ কাজ বাকি রয়েছে। এ কাজ কবে শুরু হবে, তা আমাদের জানা নেই। আর শেষ হওয়ার কথা সেটা তো অনিশ্চয়তার মুখে। আমরা সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাকি কাজের টেন্ডার দিয়ে কাজ শেষ করে নড়িয়া উপজেলাবাসীর ভোগান্তি থেকে মুক্তি দেয়া হোক।’

শরীয়তপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রাফেউল ইসলাম ভোগান্তির কথা স্বীকার করে বলেন, ‘নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে আগামী সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরের মধ্যে আবারও কাজ শুরু করা হবে।’
২২২ মিটার উড়াল সড়ক ও ১৪৫ মিটার দৈর্ঘ্যে ভাষা সৈনিক ডা. গোলাম মাওলা সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৯ কোটি টাকা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

টাঁকা বাড় হয়, কিন্তু সেতু বড় হয়না! সিরাজুল ইসলাম

আপডেট সময় : ০৩:৫২:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫

টাঁকা বাড় হয়, কিন্তু সেতু বড় হয়না!
সিরাজুল ইসলাম
জেলাপ্রতিনিধি,শরীয়তপুর

অনিয়ম আর লুটপাটে ৮ বছরেও শেষ হয়নি শরীয়তপুরের কীর্তিনাশা নদীর গোলাম মাওলা সেতুর নির্মাণকাজ। তিনবার পরিবর্তন হয়েছে ঠিকাদার। উপায় না পেয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন পারাপার হচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ। তবে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে কাজ শেষ করার আশ্বাস দিয়েছে এলজিইডি। ৮ বছর ধরে ঝুলে আছে মাত্র ৮০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুর নির্মাণকাজ। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনবার ঠিকাদার পরিবর্তন হয়, বাড়ানো হয় নির্মাণ খরচ। কিন্তু অনিয়ম আর লুটপাটে সম্পন্ন হয়নি কাজ। আর এর মাশুল দিতে হচ্ছে লক্ষাধিক মানুষকে। ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন ট্রলারে করে নদী পারাপার করতে হচ্ছে এলাকাবাসীর।
জানা গেছে, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার সঙ্গে ঢাকার যাতায়াত সহজ করতে ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে কীর্তিনাশা নদীর ওপর নির্মিত হয় ৮০ মিটারের ডা. গোলাম মাওলা সেতু। বিভিন্ন সময়ে বন্যার স্রোতে সেতুটির এক প্রান্ত ভেঙে গেলে ২০১৫ সালে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। পরে ২০১৭ সালে নতুন সেতু নির্মাণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেন এলজিইডি। এরপর থেকেই নানা সমস্যা দেখিয়ে কয়েক দফা বাড়ানো হয় প্রকল্পের মেয়াদ। কাজে অনীহা দেখে তিনবার পরিবর্তনও করা হয় ঠিকাদার। আর এতে সব মিলিয়ে সেতুর কাজ শেষ হয় মাত্র ৫৫ ভাগ। এরইমধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে কাজ রেখে পালিয়ে যায় সবশেষ ঠিকাদার। পরে ওই ঠিকাদার কাজ আর করবে না মর্মে এলজিইডি কর্তৃপক্ষের বরাবরে লিখিত আবেদন করেন। আবারও থেমে যায় বাকি ৪৫ ভাগ কাজ। এদিকে সেতুটির পাশেই স্থানীয়দের যাতায়াতের সুবিধার জন্য এক কোটি টাকা ব্যয় নির্মাণ হচ্ছিল ফুট ওভার ব্রিজ। দুই বছরেও শেষ হয়নি সে কাজ। নেই সে ঠিকাদারও। ফলে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষের পারাপারের জন্য নির্ভর করতে হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ ইঞ্জিন চালিত নৌকায়। এমন ভোগান্তি থেকে মুক্তি চায় স্থানীয়রা।

নদী পার হতে আসা ৬০ বছর বয়সী আয়শা খাতুন বলেন, ‘আমাদের নদী পারাপার হতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছি আমরা। অনেক সময় পানিতে পড়ে যাচ্ছি। কখন যে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে জানি না। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুটির বাকি কাজ শেষ করার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।’

নৌকায় নদী পার হচ্ছিলেন আব্দুস সালাম সরদার, তিনি সময় সংবাদকে বলেন, ‘একটা সময়ে আমরা খুব ভালোভাবেই সেতুটি দিয়ে নদী পার হতাম। স্রোতের কারণে সেতুটির একপাড় ভেঙে যাওয়ার পরে গাড়ি চলাচল নিষেধ করলেও পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতাম। কিছুটা কষ্ট হলেও সবকিছুই স্বাভাবিক লাগতো। গত কয়েক বছর ধরে পুরোনো সেতুটি সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলার পরে আমাদেরকে পারাপার হতে হচ্ছে ইঞ্জিন চালিত নৌকায়। এ এক চরম বিড়ম্বনা।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঝড়-বৃষ্টি বা প্রখর রোদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে পারাপার হতে কতটা কষ্ট হয় তা বোঝানোর উপায় নেই। হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের যেতে হয় নৌকায়। রয়েছে অনেক বৃদ্ধ নারী-পুরুষ। রয়েছে অনেক রোগী। এছাড়া ব্রিজের পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে এখন বাস স্ট্যান্ড। এই বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন অন্তত ৫০ অধিক বাস ছেড়ে যায় ঢাকার উদ্দেশ্যে। এর ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ যাত্রী নদীর পূর্বপাড়ের। প্রত্যেক যাত্রীকেই পার হতে হয় এই ইঞ্জিন চালিত নৌকা করে। তাদের হাতে থাকা ব্যাগ, ছোট ছোট শিশু ও গুরুত্বপূর্ণ সব কিছুই পার করতে হয় নৌকায় করে। বলতে গেলে বাসে ওঠার জন্য নদীর পূর্ব পাড় থেকে পশ্চিম পাড়ে আসা যেন এক ভিন্ন যুদ্ধ। আব্দুস সালাম সরদার বলেন, ‘সরকারিভাবে নতুন সেতুর ৫৫ ভাগ কাজ হলেও এখনও পর্যন্ত ৪৫ ভাগ কাজ বাকি রয়েছে। এ কাজ কবে শুরু হবে, তা আমাদের জানা নেই। আর শেষ হওয়ার কথা সেটা তো অনিশ্চয়তার মুখে। আমরা সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাকি কাজের টেন্ডার দিয়ে কাজ শেষ করে নড়িয়া উপজেলাবাসীর ভোগান্তি থেকে মুক্তি দেয়া হোক।’

শরীয়তপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রাফেউল ইসলাম ভোগান্তির কথা স্বীকার করে বলেন, ‘নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে আগামী সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরের মধ্যে আবারও কাজ শুরু করা হবে।’
২২২ মিটার উড়াল সড়ক ও ১৪৫ মিটার দৈর্ঘ্যে ভাষা সৈনিক ডা. গোলাম মাওলা সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৯ কোটি টাকা।